শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৫ পূর্বাহ্ন
এম জাহেদ চৌধুরী : প্রবাদ আছে, ‘কাকের বাসায় কোকিলের ছা’। কারণ কন্ঠে মানুষের মন কাড়লেও কোকিল তৈরী করে না নিজের নিবাস। ফলে কোকিল ডিম পাড়ে কাকের বাসায়। তাও কাকের ডিম নষ্ট করেই নিজের ডিম দিয়ে আসে। সেখানেই কাক ‘তা’ দিয়ে ফুটায় কোকিলের ছানা। এভাবেই বংশবৃদ্ধি করে চলে কোকিল। অনুরুপভাবে কক্সবাজারের চকরিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ময়ূরের শাবক ফুটেছে। ৩ টি ময়ূরের দেয়া ১৭ টি ডিমের মধ্যে ১০ টি ডিম রাখা হয়েছিল বন মুরগীর বাসায়। অপর ৭ টি ডিম রাখা হয় ইনকিউবেটরে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে কৃত্রিম প্রজননে মাত্র ১ টি ডিম থেকে ছানা ফুটে। অপর দিকে বনমুরগী তা দিয়ে ছানা ফুটিয়েছে ৯ টি। এ ঘটনা যারাই জানছেন তাদের মুখে নতুন প্রবাদ শুরু হয়েছে, ‘মুরগির বাসায় ময়ূরের শাবক’।
একসাথে ১০ টি ছানার মধ্যে ৪ টি বন্যপ্রাণী হাসপাতালের আইসিইউতে, ৩ টি মা ময়ূরের সাথে, ৩ টি আলাদা সেইফ হোমে রাখা হয়েছে। নিজ নিরাপত্তা শক্তি অর্জনের পর ছানাগুলো অপরাপর ময়ূরের পাখিশালায় ছেড়ে দেওয়া হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম জানান, ময়ূর ছানাগুলো পর্যাপ্ত শক্তি সঞ্চয়ের পর পাখিশালায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে ২৯ টি ময়ূর রয়েছে। তন্মধ্যে ১০ টি গত বছরের ডিসেম্বরে গাজীপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক থেকে আনা হয়েছে। অপর ১৯ টি ময়ূর বিগত ওয়ান ইলেভেন সরকারের শাসন আমলে ভিআইপি নেতাদের বাসা থেকে জব্দ করে সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়েছিল। নতুন ছানাসহ পার্কে এখন ৩৯ টি ময়ূর রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বন্যপ্রাণী হাসপাতালের সেইফ হোমে মা ময়ূরের পিছু নিয়েছে ৩ টি ছানা। মাঝেমধ্যে ভয় পেয়ে পাখার নিচে লুকিয়েও যাচ্ছে। খাবার পেলে মা ময়ূর বিশেষ শব্দে ছানাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ছানাগুলো শব্দ শুনে দ্রুত পৌঁছায় মায়ের কাছে। ময়ূরছানার এমন উচ্ছল ছোটাছুটি বেশ উপভোগ করছেন সেবায় নিয়োজিত পার্কের কর্মীরা। এইসময় পাখিশালায় রাখা ময়ূর দেখতে দর্শনার্থীদের বেশ আগ্রহ দেখা গেছে। তাদের মধ্যে বাঁশখালী থেকে আসা শাকিল নামে এক যুবক বলেন, ‘শুনেছি আরো ১০ টি ময়ূর ছানা ফুটছে। সেই ছানাগুলো পাখিশালায় আনলে আরো বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠবে ময়ূর দর্শন।’
তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘৩৫ দিন পূর্বে ৩ টি ময়ূর ডিম দিয়েছিল। সেখান থেকে কৃত্রিম উপায় ১ টি ও উন্মুক্ত স্থানে থাকা বনমুরগীর দেয়া ডিমের সাথে অদলবদল করে ৯ টিসহ ১০ টি ময়ূর ছানা ফুটছে। ময়ূরের গড় আয়ু ২০ বছর। এরা সাধারণত বীজ, পোকামাকড়, সরীসৃপ, ফল এবং ছোট প্রাণী খেয়ে থাকে। তবে সেইফ হোমে রাখা ছানাগুলোকে ভুট্টার গুঁড়া দেয়া হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে দেশের প্রথম সাফারি পার্ক হিসেবে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই পার্কে প্রায় সাড়ে ৩০০ পশু-পখি রয়েছে বেষ্টনীতে। উন্মুক্ত রয়েছে হরিণ, বানর, খরগোশসহ প্রায় ৩ হাজার প্রাণী।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply